গরীব ছেলে ও বড়লোক মেয়ের অবুঝ ভালোবাসা - ভালোবাসার গল্প Love story bangla

ভালোবাসার গল্প কষ্টের, প্রেমের গল্প, Love story in bangla


গল্পঃ গরীব ছেলে ও বড়লোক মেয়ের অবুঝ ভালোবাসা
লেখকঃ কুমার কনক


আকাশ গ্রামের ছেলে বাবা মা বলতে তার কেউ নেই।আকাশ ছোট বেলায় মা বাবাকে এক দূর্ঘটনায় হারিয়ে ফেলে।ছোট থেকে আকাশ তার মামা মামির কাছে রয়েছে।তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো না।গ্রামের কৃষি কাজ করে তাদের সংসার চলে।

অপরদিকে আকাশের মামা মামি কখনো আকাশকে অবহেলা করেনি নিজের সন্তানের মতোই দেখে।আকাশ তার মামার সাথে কৃষি কাজ করে পাশাপাশি পড়াশোনা করে।আকাশ পড়াশোনাই অনেক ভালো একজন ছাত্র।সামনে তার এইচএসসি পরীক্ষা টাকার অভাবে সে কখনো প্রাইভেট পড়তে পাড়েনি।সে প্রাইভেট না পড়তে পারলেও সে প্রতিনিয়ত বাসায় পড়াশোনা করে।যত দিন যায় তার পরীক্ষার সময় আসতে শুরু করে।

কিছু দিন পর আজ আকাশের প্রথম পরীক্ষা।সে পরীক্ষা হলে বসে আছে নিজেকে অনেক Nervous Feel করছে আর ভাবছে না জানি প্রথম পরীক্ষাটা কেমন হয়।একটু পরে আকাশের পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো তার প্রথম পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে।সে যেমন ভেবেছিলো সে রকম কিছুই হয় নি একটু Nervous থাকলেও সে ভালো ভাবেই পরীক্ষাটা দেয়।এক এক করে তার সব পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়।

পরীক্ষা শেষ রেজাল্ট দিবে ২-৩মাস পর এই সময় আকাশ বসে না থেকে মামার সাথে আবার প্রতিনিয়ত কৃষি কাজ করতে থাকে।কৃষি কাজ করে সে টাকা জমাতে শুরু করে কারণ তাকে জীবনে অনেক বড় হতে হবে।তার স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার।এভাবে চলতে লাগলো তার জীবন।

৩ মাস পর আজ আকাশের রেজাল্ট দিবে। সে অনেক টেনশনে আছে না জানি রেজাল্ট কেমন হয় ।সবার দোয়া ভালোবাসায় সে আবারো GPA 5 পেয়েছে।আকাশ নিজের রেজাল্ট পেয়ে অনেক খুশি সাথে তার মামা মামিও অনেক খুশি হয়েছে তার রেজাল্ট দেখে।তার কিছু দিন পরে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয় এবং সে চান্স পেয়ে যায়।

আজ ভার্সিটির প্রথম দিন আমি যখন কলেজ গেট দিয়ে ঢুকতে যাবে এমন সময় কারো সাথে বাড়ি খেয়ে পড়ে গেলাম তাকিয়ে দেখি এক মেয়ে (মেয়েটির চেহারা অনেক মায়াবী এক কথায় পরীর মতো দেখতে)মেয়েটি দাঁড়িয়ে ঠাসসস আমার গালে চর বসিয়ে দিলো আর বলতে লাগলো ছোট লোক ক্ষেত দেখে হাঁটতে পারিস না।

আমিঃ সরি আসলে আমি ইচ্ছে করে আপনাকে ফেলে দেয়নি।তাড়াতাড়ি আসতে গিয়ে কখন যে পড়ে গেলাম বুঝতে পাড়ি নি।

মেয়েটিঃ চুপ ছোট লোক ক্ষেত একদম মিথ্যা বলবি না সুন্দরী মেয়ে দেখলেই ঢেক্কা দিতে মন চাই বলে ঠাসসস ঠাসসস আরো দুইটা চর দিল মেয়েটি।

পিছন থেকে আরেক মেয়েটি বললো তাড়াতাড়ি চল নিলা ক্লাসের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।এই ছোট লোকটাকে পরে দেখে নিব এখন চল তাড়াতাড়ি।আমি সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি একটু পর নিলা ও তার বান্ধবী ক্লাসে চলে যায় আর বলে যাই তোকে পরে দেখে নিব।আজকের গল্পের নায়িকা হলো নিলা।নিলা বড় লোক বাবার আদরের একমাত্র মেয়ে।দেখতে অনেক মায়াবী পরীর মতো।আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম মেয়েটিকে তো আমি ঢেক্কা দেয়নি।আমার সামনে তো কোনো মেয়ে ছিলো না। তাহলে নিলা কেনো আমাকে ঢেক্কা দিলো হয়তো সে তাড়াতাড়ি আসতে গিয়ে আমার সাথে ঢেক্কা খেয়ে যায়।আমার মতো ছোট লোক ক্ষেত কে দেখে অপমান করে।বড় লোকরা সব করতে পাড়ে এসব ভাবতে ভাবতে আমি ক্লাসে চলে আসলাম।ক্লাসে গিয়ে দেখি নিলা আমার সাথে পড়াশোনা করে।সেদিনের মতো ক্লাস করে বাড়িতে চলে আসলাম।

পরের দিন ভার্সিটিতে গেলাম নিলা তার বান্ধবীদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে এমন সময় আমাকে দেখে বললো এই ছোট লোক ক্ষেত শোন।আমি তাদের কাছে গিয়ে বললাম।

আমিঃ জি বলেন

নিলাঃ তোর মতো ছোট লোক ক্ষেত এই ভার্সিটিতে চান্স পাইলি কি করে।

আমিঃ নিজের যোগ্যতায়..

নিলাঃ চুপ একদম উঁচু গলাই কথা বলবি না (বলে ঠাসসস করে চর বসিয়ে দিলাম) ছোট লোকের আবার যোগ্যতা।

সেদিন নিলা ও তার বান্ধবীরা আমাকে অনেক অপমান করে। আমি চুপচাপ সব সহ্য করে ক্লাস রুমে চলে আসলাম। নিলা আমাকে প্রতিনিয়ত অপমান করতে থাকে।নিলাকে যে দিন প্রথম দেখি সেদিন তার প্রেমে পড়ে যায় কিন্তু মেয়েটি আমাকে এত অপমান করার পরও তাকে ভালেবেসে ফেলি।

১ বছর পর এই এক বছরে নিলা আমাকে প্রতিনিয়ত অপমান করে গেছে।একদিন  সাহস করে নিলাকে আমার মনের কথা বলে দিলাম।

আমিঃ নিলা তোমাকে কিছু বলার আছে?

নিলাঃ ছোট লোকের আবার কি বলার থাকতে পাড়ে। যা বলবি তাড়াতাড়ি বল...

আমিঃ নিলা আমি তোমাকে ভালোবাসি।যেদিন প্রথম তোমাকে দেখি সেদিন তোমার মায়ায় পড়ে যায়। অতঃপর তোমাকে ভালোবেসে ফেলি।Do You Love me?

নিলাঃ ঠাসসস ঠাসসসস তোর কি যোগ্যতা আছে আমার সাথে প্রেম করার ছোট লোক ক্ষেত কোথাকার।বলে নিলা আমাকে মারতে শুরু করলো এবং কাকে যেনো ফোন করে তাড়াতাড়ি ভার্সিটি আসতে বললো।কিছুক্ষণ পর কয়েকটি ছেলে এসে আমাকে মারতে শুরু করলো।নিলা আমার মাথায় কি যেনো দিয়ে বাড়ি মারলো ছেলে গুলোও আমাকে মারতে মারতে রক্তত্ব করে দেয় এক সময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি তারপর আর কিছু মনে নেয়।

১৫ দিনপর আজ আমার জ্ঞান ফিরলো আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি।পাশে তাকিয়ে দেখি মামা মামির চোখে পানি আর বলতে লাগলো আজ ১৫ দিন পর তোর জ্ঞান ফিরলো।তারমানে আমি ১৫দিন জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম।

মামিঃ কেমন আছিস বাবা এখন?

আমিঃ ভালো মামি আপনারা টেনশন করেন না দেখেন আমি তো সুস্থ হয়ে গেছি।

কিছুদিন বাড়িতে ছিলাম এর মাঝে ভার্সিটি যাওয়া হয় হয়নি।এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ তাই ভাবছি আজ ভার্সিটি যাবো।অপরদিকে নিলা আকাশের সাথে করা ব্যবহারের জন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পাড়ছে না সে প্রতিদিন ভার্সিটিতে আকাশের জন্য অপেক্ষা করে ক্ষমা চাইবে বলে।এখন নিলা আকাশকে ভালোবাসে।নিলা ভাবছে আকাশ কি তাকে ক্ষমা করবে মেনে নিবে।

আকাশ অনেকদিন পর ভার্সিটি আসলো হঠাৎ পিছন থেকে খুব চেনা কন্ঠ তার কানে আসলো আকাশ শুনো।আকাশ পিছনে তাকিয়ে দেখে নিলা তাকে দেখছে।

আমিঃ নিলা আমি যদি আপনার কাছে কোনো ভুল করে থাকি তাহলে আমাকে মাফ করে দিবেন।তাও প্লিজ আমাকে আর অপমান করবেন না।আমি ছোট লোক ক্ষেত হলেও আমি একজন মানুষ।কথা দিচ্ছি কখনো আপনার সামনে আসবো না।

নিলাঃ সরি আকাশ.....ছোট বেলা থেকে বাবা মার আদর পেয়ে মানুষকে মানুষ মনে করতাম না।শুধু টাকা থাকলেই মানুষ হওয়া যায় না। আমার ব্যবহারের জন্য কখনো তুমি আমাকে ক্ষমা করবে কি না তাও জানি না।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।এই কয়েকদিনে বুঝতে পারলাম আমিও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।

বলে নিলা আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়।

আমিঃ ছাড়ুন বলছি।নিলাকে সরিয়ে দিয়ে আপনারা বড় লোকরা অনেক অভিনয় করতে পাড়েন আমি তো আপনার যোগ্য ছিলাম না তাহলে আজ এই ছোট লোক ক্ষেত ছেলেকে ভালোবাসি বলছেন।

নিলাঃ কান্না কণ্ঠে আমি অভিনয় করছি না আকাশ। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।

আমিঃ আপনার যোগ্যবান কোনো ছেলেকে গিয়ে বলেন ভালোবাসি।বলে ক্লাসে চলে আসলাম।

নিলা সেখানে দারিয়ে না থেকে বাড়িতে গিয়ে কান্না করেই যাচ্ছে।অপরদিকে নিলার মা মেয়ের এমন অবস্থা দেখে নিলার বাবাকে ফোন দেয়।নিলার বাবা মা কারণ জানতে চাইলে নিলা সব খুলে বলে আকাশের সাথে এত দিন কি কি করেছে।

নিলার মাঃ আকাশ তো ঠিক করেছে তোর সাথে তোকে নিজের মেয়ে বলতে ঘেন্না হচ্ছে।কিভাবে পারলি ছেলেটার সাথে এত দিন এমন করতে।

নিলাঃ কান্না কণ্ঠে মা আমি আকাশকে ভালোবাসি প্লিজ ওকে তোমরা এনে দাও ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না এসব বলছে আর কান্না করে যাচ্ছে।

নিলার মাঃ কান্না করে লাভ নেয় তুই যদি সত্যিই আকাশকে ভালোবেসে থাকিস তাহলে একদিন আকাশকে ঠিক পাবি।

নিলা কান্না করেই যায় সেদিন নিলার মা নিলাকে অনেক খাওয়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।পরেরদিন নিলা ভার্সিটি গিয়ে আকাশের কাছে আবারো ক্ষমা চাই ভালোবাসি বলে কিন্তু আকাশ তাকে ফিরিয়ে দেয়।প্রতিনিয়ত নিলা আকাশের কাছে ক্ষমা চাইতো।এভাবে চলতে থাকে তাদের জীবন নিলা প্রতিদিন আকাশের জন্য কান্না করে খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করে না চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।আকাশ জানে নিলা এখন আকাশকে অনেক ভালোবাসে।আকাশ চাই নিলার যোগ্য হয়ে তারপর তাকে বিয়ে করতে।ভার্সিটি জীবন শেষ আকাশ এখন দেশের Top Businessmen দের মাঝে একজন।এর মাঝে কয়েক বছর চলে যায় একদিন সে রাস্তায় নিলাকে দেখতে পায় নিলা আগের চেয়ে শুকিয়ে গিয়েছে।অপরদিকে নিলা আজও আকাশের জন্য অপেক্ষা করে আকাশের জন্য কান্না করে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না।নিলা জানে আকাশ তাকে একদিন না একদিন ঠিক মেনে নিবে।

এর কিছুদিন পর আকাশ ও তার মামা মামি নিলার বাড়িতে গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয় নিলার মা বাবা সবাই রাজি হয়ে যায় সাথে নিলাও অনেক খুশি হয়।এক সপ্তাহ পরে তাদের বিয়ে।আজ নিলা আর আকাশের বিয়ে।

অনেক ধুমধাম করে তাদের বিয়েটা হয়ে যায়।এভাবে চলতে লাগলো তাদের সংসার।এখন তারা কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পাড়ে না।

এভাবেই বেঁচে থাকুক প্রতিটি ভালোবাসা

............................ সমাপ্ত........................

[বিঃ দ্রঃ গল্পটি কাল্পনিক জ্ঞান  থেকে লেখা।গল্পে ব্যবহার করা চরিত্রগুলো সব কাল্পনিক।গল্পটি ভালো লাগলে সবাই সাপোর্ট করবেন]