কলঙ্কিনী - বাংলা কবিতা - Bangla Sad Poem - Koster Kobita

প্রিয় পাঠকগন, কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো 'মুনমুন ফেরদৌসী দীপ্তি' আপুর লেখা একটি  কষ্টের কবিতা। আশা করি এই কবিতা টি আপনাদের ভালো লাগবে। আর হ্যাঁ, এই রখম আরো কষ্টের কবিতা পেতে আমাদের ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।


কবিতার নামঃ কলঙ্কিনী।
লিখেছেনঃ মুনমুন ফেরদৌসী দীপ্তি।

লোকে বলে, তুমি নাকি আমাদের প্রেম নিলামে তুলেছো,
একটু একটু করে সুতো কেটে পালাতে চাইছো৷ 
তোমাকে কখনো আমি নাটাইয়ের সুতো দিয়ে বেঁধে রাখিনি
কিংবা ঘুড়ি হয়ে উড়তে উড়তে কখনো পড়োনি আমার জানালায়, 
তবে কেন এত আয়োজন সুতো কাটার?
মানুষের মুখে এখন আমাদের প্রেমের বুলি,
তুমি হৃদয় দিয়ে যেগুলো অনুভব করেছিলে;
তারাও বলে বেড়াচ্ছে সেগুলো তারা শুনতে পায়!
পার্থক্য, তোমার অনুভূতি প্রকাশে যে মাদলতা ছিল,
তাদেরগুলোতে আছে অনুকরণের অট্টহাসি!
তারা প্রতিনিয়ত আমাদের প্রেম কলুষিত করে
প্রস্তাব দিয়ে চলেছে!
তোমার দেওয়া নিলামে ওঠা প্রেম বলে কথা!
তাকে নর্দমায় ছুঁড়ে দিতে পারছি না
আবার বুকের মাঝে আগলেও রাখতে পারছি না৷
কেবল রক্তক্ষরণে ফ্যাকাশে হচ্ছি,
পরশীরা বলছে হিমোগ্লোবিনের অভাব।
কোমরে শাড়ি পেঁচিয়ে বলেছি, সময়টা এখন আমার নয়, ওটা এখন নিন্দুকের জিহ্বার রসমালাই৷
শাড়ির কথা আসতেই মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা৷
বলেছিলে, 'দেখবো আজ কত হাঁটতে পারো!'
উহু, রাগ করিনি এতটুকু, উল্টো খুশি হয়েছিলাম৷
সন্ধ্যার সেই মৃদু-মন্দ বাতাস কানাকানি করে চলেছিল;
আমিও কান পাতলাম, শুনি ওরা বলছে, 
'এবার দুজনে হাত ধরে পা ফেলবে তালে তালে আর
ফুটপাথে চিহ্ন রেখে যাবে ওদের ভালোবাসার৷'
একটু থেমে বলেছিলাম, 'এ্যাই একটু ধীরে চলো,
শাড়ি পরেছি তো!' 
যেই তুমি থামলে, ওমনি তোমার হাতখানা নিলাম আমার হাতের মুঠোয়, তারপর আর থামিনি;
হেঁটেছি ফুটপাথ আর গাছগুলোকে সাক্ষী রেখে৷
একদিন আমার চুলে মুখ লুকিয়ে বলেছিলে,
'তোমার চুলের ঘ্রাণে আমি পাগল!'
দেখা হলেই আমার হাতটি নিয়ে বুকে জড়িয়ে রাখতে
অথবা আঙ্গুলে আঙ্গুলে খেলায় মেতে থাকতে৷
একবার খুশি হয়ে উপহারে দিয়েছিলে আঙ্গুলে তোমার
ঠোঁটের স্পর্শ৷
হাঁটতে থাকায় আমার ঘনঘন শ্বাস প্রশ্বাসও ছোট্ট যন্ত্রটি
ঠিক তোমাকে জানিয়ে দিতো৷
আমার ত্বকে রাখতে চেয়েছিলে তোমার ভালোবাসা৷
ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর কাজলবিহীন চোখও
তোমাকে আকর্ষণ করতো; 
বলতে, 'সাজগোজ ছাড়াই তুমি অনেক সুন্দর!'
কতবার কত নাম দিয়েছো! 
খাইনি শুনে জানতে চেয়েছিলে, 'মহারাণীর মুখে হাসি নেই কেন?'
আর বিদায় বেলায় দিয়েছিলে খুব আদুরে স্পর্শ
দু'চোখের পাতায়৷ 
জানিয়েছিলে, 'আমি আছি, শুধু তুমি ভালো থেকো৷'
হঠাৎ একদিন ঝড় নামলো আর দেখা হলো না আমাদের!
তবে চিঠি দিতে ভোলোনি৷
চিঠির সেই শব্দগুলো আজও আমার চারপাশে 
কবিতা হয়ে আবৃত্তি করে চলেছে,
'যদি আমার কাছে আসো, জানবো তুমি মেয়ে মানুষ না, তুমি কলঙ্কিনী৷'
তোমাকে কাছে পেতে চাওয়ার অপরাধে এ নাম
প্রাপ্য হলে, আমি মাথা পেতে নেবো পুরস্কার মনে করে৷
তৃষ্ণার্ত দু'চোখ তোমাকে খোঁজার অপরাধে
চোখ দু'টো উপড়ে নিলে এই অন্ধত্বকে আজীবন সুখ মনে করে সুখী থাকবো আমি৷
তোমাকে ভালোবাসার অপরাধে আমরণ চাবুকের মৃত্যুদন্ত দিলে, 
প্রতি চাবুকের আঘাতে বলবো, 'ভালোবাসি তোমায়৷'
হাসিমুখে  করবো সেই মুত্যুকে আলিঙ্গন৷
তবুও আমি চিৎকার দিয়ে বলতে চাই, হ্যাঁ আমি কলঙ্কিনী কিন্তু মেয়ে মানুষও।
মেয়ে মানুষই ভালোবাসার দায়ে উপাধি পায় কলঙ্কিনীর৷

ট্যাগসঃ ভালোবাসার কষ্টের কবিতা, প্রেমের কবিতা